Book Author | |
---|---|
Publication | |
Page Count | 136 |
ISBN | 9789849726470 |
Published Year | |
Language |
লখনউনামা (হার্ডকভার)
ভ্রমণ আমার কাছে কোন সাধারণ ব্যাপার নয়। মানুষ যেমন হীরে জহরত সংগ্রহ করে বা নতুন নতুন গাড়ি বাড়ির নেশা করে, ভ্রমণ আমার কাছে তেমনই এক নেশা। দিন পেরোয়, অভিজ্ঞতা বাড়ে কিন্তু এই নেশা থাকে আনকোরা।
ভাষা শেখার ব্যাপারে দুর্বলতা আমার আজন্ম কালের। দক্ষিণ ভারতে বহু বছর ধরে বসবাস করার সুবাদে বিভিন্ন ভাষার সাথে পরিচয় হতে হয়ই। এখানকার স্থানীয় ভাষা কাণ্ণাড়, আর মুসলমানদের ভাষা উর্দু। বিভিন্ন ভাষাভাষী বন্ধুবান্ধবের সুবাদে তাদের বৈঠকখানার মেজাজ জানা হয়েছে বেশ। হিন্দি, কাণ্ণাড়, তামিলের সাথে সাথে ঘুরে আসার সুযোগ হয়েছে উর্দু, ফারসির শের শায়েরী, মুশায়েরার জগত থেকে। এই কবিতা, গযলের এক সময়কার জমজমাট পীঠস্থান ছিল ভারতের লখনউ নগর। লখনউ আমি গিয়েছি চার বার। প্রথমবার গিয়ে মনে হয়েছিল সব কিছু দেখা হয়নি, তাই দ্বিতীয় বার যাওয়া। এরপর নেশা আর কাটেনা। নবাবদের হাত ধরে ইরান থেকে আসা পারস্য সংস্কৃতি, ইমারত, রসনার টানে এমনকি অতিমারির সময়ও চলে গিয়েছিলাম লখনউ। খুঁজে বের করেছিলাম লখনউ শাসন করে যাওয়া এগারো জন নবাবের রওযা এবং তাঁদের দ্বারা নির্মিত ইমারত, বাজার, লোকালয়। বেশিরভাগ ভবনের অস্তিত্ব এখন নেই বা কেউ আর সেসবে আগ্রহ দেখায়না।
ভারত উপমহাদেশে পারস্য সংস্কৃতির প্রচলন হয়েছে লখনউ এর নবাবদের হাত ধরে। আদব কায়দা, শায়েরী, গযলের সাথে সাথে নবাবগণ সাথে করে এনেছিলেন বিরিয়ানি, পরোটা, নানা পদের মিষ্টান্ন। ঘুরি ওড়ানো, পশুপাখির লড়াইয়ের মতো শৌখিন খেলাধুলার প্রচলন করেছিলেন লখনউ এর নবাবগণ। অখণ্ড ভারতে বিভিন্ন রাগরাগিণীকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন এঁরাই সর্বপ্রথম।
এতবার লখনউ ভ্রমণের পরও কোথায় যেন কি বাকি থেকে যায়। মনে হয় গোমতী নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই নগরকে আজ আর কদর করছেনা কেউ আগের মতোন, নেই আগের সেই ঝংকার, প্রাণের আকুতি। তবুও আসফি মসজিদের সিড়িতে বসে থেকে আমি শান্তি পেয়েছি, ছত্তর মঞ্জিলের কোল ছুঁয়ে থাকা গোমতী নদীর স্থিরতা আমাকে ভাবিয়েছে, বড় ইমামবাড়ার ছাদে দাঁড়িয়ে থেকে সত্যি সত্যিই লবঙ্গ মোটিফের শরীর থেকে আমি সুগন্ধ পেয়েছি।
লখনউ এর কয়েকজন মানুষ কখনোই আমার মন থেকে মুছে যাবেনা। লখনউ নিয়ে টুকরো টুকরো লেখার ব্যাপারে ইতিহাসবিদ আশফাক খান এবং নবাবের বংশধর শেহযাদি মনযিলাত ফাতিমার অবদান অনস্বীকার্য। যে আদর আপ্যায়ন আমি লখনউবাসীর কাছ থেকে পেয়েছি তা ভুলতে গেলে নিজেকেই ভুলে যেতে হবে। এ শহর আমার নিঃশ্বাসে মিশে আছে। লখনউ আমার কাছে এক ভালোবাসার নাম, বার বার দেখার পরও না ফুরানো ভালোবাসা।
-ফাতিমা জাহান
লখনউ, ভারত
২৪/০১/২০২১
-
Free worldwide shipping on all orders over 1000 BDT
-
Delivers in: 3-7 Working Days Shipping & Return
Reviews
There are no reviews yet.